Wednesday, May 23, 2018

ভাইকিংস এক যোদ্ধা জাতির উপাখ্যান





ভাইকিংস এক যোদ্ধা জাতির উপাখ্যান

ভাইকিংস। অনেকেই এদের বলে জলদস্যু,ডাকাত এবং সমুদ্রের ত্রাস।ইউরোপ ইতিহাসে যুদ্ধবাজ এবং লুটেরা জাতি হিসেবে এদের অনেক কথাই বীরদর্পে বলা আছে।তবে এরা ছিল অনেকটাই বর্বর জাতি।লুটতরাজ, খুন, এসব ছিল ওদের কাছে বীরত্ব।এরা যে যত বেশি ডাকাতি করতে পারতো সে নিজেকে ততো বড় বীর মনে করতো। ভাইকিংস শব্দটি এসেছে নরওয়ের নর্স ভাষা থেকে।নর্স ভাষায় ভাইকিংস শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘জলদস্যু’ আরএক ভাবে এই শব্দকে বিশ্লেষন করলে এর অর্থ দাড়ায় উপসাগরে বসবাসকারী মানুষ।প্রায় ৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভাইকিংসদের উথ্যান শুরু হয়।এবং প্রায় ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা ইউরোপ সহ অত্র অঞ্চল দাপিয়ে বেড়ায়।এবং এই সময়কালকেই বলা হয় “স্ক্যানডেনিভিয় সম্প্রসারণ” বা ‍”ভাইকিং এজ” মূলত নরওয়ে,ডেনমার্ক এবং সুইডেন ছিল এই ভাইকিংসদের আবাস্থল।এবং এই তিন দেশকেই একত্রে তখন ‘স্ক্যানডেনিভিয়’বলা হতো।ভাইকিংসদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এরা খুব ভালো নৌকা বা জাহাজ তৈরি করতে পারতো।এদের নৌকা বা জাহাজ গুলি দেখতে যেমন বাহারি সৌন্দর্যে ভরপুর তেমনি ছিল বৈচিত্রপুর্ন।বিশাল লম্বা নৌকা বা জাহাজ গুলি ডক বা বন্দর ছাড়াই উপকূলীয় বা সমুদ্র তীরে ভিড়তে পারতো। ভাইকিংসদের এমন যুদ্ধবাজ মনোভাব হবার পিছনে এদের শারীরিক গঠন অনেকটাই দায়ী।কারন এরা দেখতে অনেক লম্বা এবং চউরা দেহের অধিকারী ছিল।যার ফলে এমনিতেই তারা শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে ছিল এগিয়ে।এদের প্রধান অস্ত্র ছিল কুঠার।ভাইকিংসরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে বসবাস করতো। এক একটি গ্রাম নিয়ে একটি গোত্র।এবং গোত্র প্রধানকে ‘আর্ল’বলা হতো।এবং এই আর্ল থাকতো সকল নৌকা বা জাহাজের একমাত্র মালিক।তাই ভাইকিংসরা ডাকাতি করতে গেলে এই আর্লের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আর্ল নৌকা বা জাহাজ দিতে সম্মতি হলে তবেই তারা লুট করতে যেতে পারতো।তবে বেশিরভাগ সময়ে ‘আর্ল’ নিজেও বের হতো অভিযানে, লুট করতে। শুধু তাই নয়,এরা নিজেরা নিজেরাও অনেক সময় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যেত।বিশেষ করে কোন শক্তিশালী আর্ল তার থেকে কম শক্তি সম্পন্ন আর্লকে পরাজিত করে লুট করে নিয়ে যেত এবং পরাজিত গোত্রের আর্ল হয়ে যেত।মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা যে শুধু লুট করতো তাই নয়। এরা ভালো ব্যবসায়ীও ছিল।সেই সাথে এরা নতুন নতুন জায়গায় লুট করতে যেয়ে বাস যোগ্য ভুমি অথবা নতুন নতুন দেশ আবিস্কার করতো।ভাইকিংসরা শুরুর দিকে তাদের আশেপাশেই লুট করতো,ডাকাতি করতো।সমুদ্র পারি দিয়ে খুব দুরে যেতে তারা ভয় পেতো।কারন তাদের জাহাজগুলি দূরপাল্লার অভিযানের জন্য শক্তিশালী হলেও তারা তখনো দিক নির্নয় করতে শিখে নি।তবে খুব দ্রুতই তারা দিক নির্নয়ের এক অভিনব কৌশল হিসেবে একধরনের কম্পাস আবিস্কার করে যা দিয়ে সুর্যের অবস্থান নির্নয়ের মধ্য দিয়ে দিক নির্নয় করা যায়।সেই সাথে তারা এক ধরনের স্ফটিক ব্যবহার করে যা দিয়ে সুর্য অন্ধকার মেঘে ঢাকা থাকলে সেটা আকাশের দিকে উচিয়ে ধরলে সুর্যের আলো দেখা যেত এবং দিক নির্নয় করতে পারতো।যদিও এটা খুব সহজ ছিলো না ।কারন এভাবে সুর্যের অবস্থান নির্নয় করতে গেলে অনেক গানিতিক এবং জ্যামেতিক গননার ভিতর দিয়ে যেতে হয়।ধারনা করা হয় ভাইকিংসদের প্রথম সমুদ্রে দূর পাল্লার অভিযান শুরু হয় ‘’উত্তর’’দিকে।তারা অনেক আশা আকাংখা নিয়ে প্রথমবারের মতো সমুদ্রে উত্তর দিকে ভেসে চলে।এবং এক পর্যায়ে তারা সমুদ্রের তীরবর্তী কিংডম অফ নর্থোম্ব্রিয়া ( ইংল্যান্ড) এর এক চার্চে তারা প্রথম আক্রমন করে।এবং প্রচুর পরিমানে সোনাদানা এবং ট্রেজার নিয়ে ফিরে যায়।তাদের ‘উত্তর’ দিকে এই সফল অভিযান তাদের সাহস আরো বাড়িয়ে দেয়।এবং পরবর্তিতে তারা আরও বড় পড়িসরে উত্তরে তথা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রাজ্যে লুটপাট এবং বসতি স্থাপনের চিন্তা ভাবনা শুরু করে।কারন তারা বুঝতে পারে তাদের নিজেদের ভূমির চেয়ে উত্তরের ভূমি অনেক উর্বর।তারা এখানে বসতি গড়তে পাড়লে তাদের আর খাদ্যভাব দেখা দিবে না।ভাইকিংসরা ধর্মের দিক দিয়ে ছিল খুব গোরা।প্রচুর কুসংস্কার তারা বিশ্বাস করে।  তারা মূলত প্যাগান ধর্মের অনুসারী ছিল।তারা বিভিন্ন শক্তির পুজা করতো।এবং দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানুষ অর্থাৎ ‘নরবলি’ পর্যন্ত দিত।

No comments:

Post a Comment